সুনির্দিষ্ট
কোনো লক্ষ্য নেই। নেই
তেমন কোনো ভাবনা কিংবা দুর্ভাবনা। আছে ভালো পারফর্ম করা ও শেখার তাড়না। মুস্তাফিজুর রহমান
আইপিএল খেলতে ভারতে যাচ্ছেন খোলা মন নিয়ে।
মঙ্গলবার
বিকেলে ফ্লাইট। দুপুরে মিরপুর একাডেমি ভবনে শেষ
মুহূর্তের টুকটাক কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন মুস্তাফিজ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এক সময়ের সতীর্থ সাদমান ইসলাম, জয়রাজ শেখদের সঙ্গে দেখা হলো। কুশলাদি বিনিময়, কাজের ফাঁকেই খুনসুটি, কথাবার্তা চলল। পরিচিত
সংবাদকর্মীদের দেখে হাসি বিনিময়।
মাইক্রোফোন-রেকর্ডারের
সামনে আনুষ্ঠানিক কথাবার্তায় মুস্তাফিজের অনাগ্রহ বরাবরই। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে কথা হলো তাই আড্ডার ঢঙয়েই। আইপিএল ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করতেই নিজের মতো করে বললেন, “এত
ভাবাভাবির কী আছে ভাই! আমি তো কিছুই ভাবি না। যাব, খেলব, বল করব!”
খুব
সাধারণ কয়েকটি শব্দ, তবে এটিই
ফুটিয়ে তোলে মুস্তাফিজের দর্শন। বাংলাদেশের
ক্রিকেট আঙিনার প্রায় সবার এটা জানাও হয়ে গেছে এর মধ্যে। ক্রিকেট অথবা জীবন, মুস্তাফিজের
দর্শন একদমই সহজ-সাধারণ। ভাবনা, দুর্ভাবনা, শঙ্কা বা প্রত্যাশা, এসব তাকে স্পর্শ করে সামান্যই। বল হাতে থাকলে জানেন কি করতে হবে। নিজের মতো করে সেটাই করে যান ম্যাচে। সেই ডেলিভারিগুলো পড়তে হিমশিম খান ব্যাটসম্যানরা।
গত জুনে
ওয়ানডে আবির্ভাবের সিরিজে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ঘোল খাওয়ানোর পরই মুস্তাফিজের
দিকে নজর পড়েছিল ভিভিএস লক্ষ্মনের। সাবেক
ভারতীয় ব্যাটসম্যান এখন আইপিএল দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর। তখন থেকেই নিজ দলে মুস্তাফিজকে ভেড়ানোর লক্ষ্য ছিল
তার। গত ৬ ফেব্রুয়ারি আইপিএলের নিলামে
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ১ কোটি ৪০ লাখ
রুপিতে মুস্তাফিজকে দলে পায় সানরাইজার্স।
ধারাভাষ্যকক্ষে, বিশেষজ্ঞ মতামতে বরাবরই মুস্তাফিজের
প্রশংসায় দারুণ উচ্চকিত দেখা গেছে লক্ষ্মনকে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে ভারতে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে
এলেন মুস্তাফিজ। লক্ষ্মনের সঙ্গে কথা হয়নি? চেনা সেই নিষ্পাপ হাসিতে মুস্তাফিজের সরল
উত্তর, “আমি তো আসলে ইংরেজি বা হিন্দিতে
অতটা অভ্যস্ত নই। হয়ত এ কারণেই কারও সঙ্গে কথা হয়নি।”
বলকে
যিনি কথা বলাতে পারেন, মুখের
ভাষার সীমাবদ্ধতায় তার কি আসে-যায়! বিদেশি ভাষা তার কাছে যেমন দুর্বোধ্য, ব্যাটসম্যানদের কাছে আরও বেশি দুর্বোধ্য
মুস্তাফিজের বলের ভাষা। সবশেষ ম্যাচটিতেও
সেই প্রমাণ রেখে এসেছেন ভারতের মাটিতেই। কলকাতায়
নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। কেন উইলিয়ামসনের মত সময়ের অন্যতম সেরা ও
স্মার্ট ব্যাটসম্যানকেও বোকা বানিয়েছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে।
সেই
উইলিয়ামসনকে হায়দরাবাদে সতীর্থ হিসেবেই পাচ্ছেন মুস্তাফিজ। একই দলে থাকছেন ভারতের অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার আশিস নেহরা। বিশ্বকাপ চলার সময়ই যিনি মুস্তাফিজকে নিয়ে
জানিয়েছিলেন মুগ্ধতা ও আইপিএলে নিজ দলে পাওয়ার স্বস্তি। ভারতের উঠতি বাঁহাতি পেসার বারিন্দর স্রানও আছেন দলে; আছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বাঁহাতি
পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। স্কোয়াডে আরও
পেসার আছেন ভূবনেশ্বর কুমার, অভিমন্যু
মিঠুন, বিদেশি পেসারদের
মধ্যে বেন কাটিং। একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য তাই জোর
লড়াই করতে হবে মুস্তাফিজকে।
যথারীতি
এটা নিয়েও মুস্তাফিজের ভাবনা আছে সামান্যই। তিনি
বরং শিখতে চান নেহরা-বোল্টদের কাছ থেকে। ভেতরে
ঢোকানো ডেলিভারিটি নিয়ে কাজ করছিলেন, মাঝে চোটের কারণে কিছুদিন বন্ধ ছিল সেটার পাঠ। এবার বোল্টদের দেখে সেটা আরও ঝালিয়ে নিতে
চান, “শেখার ইচ্ছে তো
আছেই। একসঙ্গে এতজন বাঁহাতি পেসার থাকলে
অনেক কিছুই শেখা যায়।”
কাঁধের
চোট ও সাইড স্ট্রেইনের সমস্যা আপাতত নেই। সতর্ক
অবশ্য থাকতে হবে। বাংলাদেশ দলের ফিজিও বায়েজিদুল
ইসলাম তাই একটি নির্দেশনা পাঠিয়ে দেবেন সানরাইজার্সের ফিজিওর কাছে।
আইপিএলে
মুস্তাফিজের দলের প্রথম ম্যাচ ১২ এপ্রিল, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে বেঙ্গালুরুর
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে, যে মাঠে
বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলে এলেন মুস্তাফিজ। মাত্র
তিনটি ম্যাচ খেলেছেন, তাতেই
মাতিয়ে এসেছেন বিশ্বকাপ। নিশ্চয়ই দারুণ
কিছুর প্রত্যাশা করছে তার আইপিএল দল। মুস্তাফিজ
নিশ্চয় চাইবেন প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে।
একাডেমি
ভবনের সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে পেছন ফিরে চান মুস্তাফিজ। প্রশ্ন শুনে আবারও মুখে সেই ভুবন ভোলানো হাসি, “আপনারা
আমাকে চেনেন না? আমি মুস্তাফিজ কি
এত কিছু ভাবি! খেলার কথা, খেলব। ভালো করার চেষ্টা করব।”
এটাই
মুস্তাফিজ; ভাবনার জগতে ডুব
দেওয়া তার চরিত্রে নেই। তবে বল হাতে যা
পারেন, তাতে আইপিএলে
ব্যাটসম্যানদের দুর্ভাবনার শুরু এই হলো বলে!